কিডনি রোগের লক্ষণ কি কি? বিস্তারিত গাইড, প্রতিরোধ ও করণীয়!
কিডনি রোগের প্রাথমিক ও গুরুতর লক্ষণ, কারণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানুন। প্রস্রাবের পরিবর্তন, ফোলা, দুর্বলতা, বমি এসব কি কিডনি রোগের লক্ষণ? বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
কিডনি আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা রক্ত পরিষ্কার করা, বর্জ্য পদার্থ বের করে দেওয়া, শরীরে পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কিন্তু অনেক সময় আমরা কিডনির যত্ন ঠিকমতো না নিলে বা কিছু শারীরিক সমস্যার কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। দুঃখজনক বিষয় হলো প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগের লক্ষণ গুলো খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে না।
তাই সচেতন থাকা জরুরি। এই আর্টিকেলে আমরা জানব কিডনি রোগের লক্ষণ কি কি, কেন হয়, কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় এবং কি করণীয়।
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ
অনেক সময় কিডনি রোগের শুরুতে খুব বড় ধরনের উপসর্গ দেখা যায় না। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ লক্ষ্য করা যেতে পারে।
প্রস্রাবে পরিবর্তন
- প্রস্রাব বেশি হওয়া বা খুব কম হওয়া
- প্রস্রাবে ফেনা বা ফেনিলভাব আসা
- প্রস্রাবে রক্ত দেখা
শরীরে ফোলা (Swelling)
- চোখের নিচে ফোলা
- পা, গোড়ালি ও হাত ফোলা
- হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা
- সামান্য কাজেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- শরীর ভেঙে পড়া
- খাবারে অনীহা ও বমি বমি ভাব
- ক্ষুধা না লাগা
- বমি বা বমি ভাব হওয়া
শ্বাসকষ্ট
- অল্প হাঁটাহাঁটি করলেই শ্বাসকষ্ট হওয়া
- রাতে শুয়ে থাকলে শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
কিডনি রোগের গুরুতর লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না করলে কিডনি রোগ ধীরে ধীরে গুরুতর রূপ নেয়। তখন নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
- রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া (High Blood Pressure)
- শরীরে অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়া
- প্রস্রাব একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়া
- হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া
- ত্বক চুলকানি
- মানসিক বিভ্রান্তি বা মনোযোগ কমে যাওয়া
- খিঁচুনি পর্যন্ত হতে পারে
কিডনি রোগের কারণ
কিডনি রোগ হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যেমন
- ডায়াবেটিস (Diabetes)
- উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
বংশগত কারণ
- অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার খাওয়া
- পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া
- দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া
- মূত্রনালী সংক্রমণ অবহেলা করা
কিডনি রোগ প্রতিরোধের উপায়
কিডনি রোগ থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা সবচেয়ে জরুরি। যেমন—
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন (প্রতিদিন ২–৩ লিটার)
- অতিরিক্ত লবণ ও ঝাল খাবার এড়িয়ে চলুন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন।
- উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন।
যেকোনো অ্যান্টিবায়োটিক বা ব্যথার ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাবেন না।
আরো পড়ুন:- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় কি
কিডনি রোগ হলে করণীয়
যদি উপরের লক্ষণ গুলোর কোনোটি আপনার শরীরে দেখা দেয়, তবে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- দ্রুত একজন নেফ্রোলজিস্টের (কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার) সাথে যোগাযোগ করুন
- প্রয়োজনীয় রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করুন।
- চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী খাদ্য তালিকা মেনে চলুন।
- নিয়মিত ওষুধ ও চিকিৎসা নিন।
শেষ কথা:
কিডনি রোগ অনেক সময় নিঃশব্দ ঘাতকের মতো কাজ করে, কারণ শুরুতে তেমন কোনো স্পষ্ট উপসর্গ দেখা যায় না।
তাই শরীরে সামান্য অস্বাভাবিকতা দেখলেই অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
প্রস্রাবের পরিবর্তন, শরীর ফোলা, দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য, শ্বাসকষ্ট এসবই কিডনি রোগের প্রাথমিক সতর্ক সংকেত। সময় মতো সচেতন হলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
