কলির অন্ত কিভাবে হবে? — পুরাণ অনুযায়ী সম্পূর্ণ কাহিনী!

পুরাণ মতে, কলির জন্ম হয়েছিল স্বয়ং ব্রহ্মার অংশ থেকে। দ্বাপর যুগের শেষে যখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৈকুণ্ঠে ফিরে যান, ঠিক সেই সময় ব্রহ্মার পিঠ থেকে জন্ম নেয় এক ভয়ানক কৃষ্ণবর্ণ অসুর অধর্ম

অধর্ম থেকে দম্ভ, দম্ভ থেকে লোভ নিকৃতি, এবং শেষে কলির জন্ম অধর্মের প্রেমিকা ছিল মিথ্যা। মিথ্যা ও অধর্মের মিলনে জন্ম নেয় দম্ভ। দম্ভ ছিল রাগী, কুটিল, বিকৃতকামী ও অত্যন্ত তেজী স্বভাবের।

দম্ভের ছিল এক বোন মায়া। বিকৃত মনস্ক দম্ভ নিজের বোন মায়ার প্রতিই কামে আসক্ত হয়ে পড়ে। দম্ভ ও মায়ার মিলনে জন্ম হয় লোভনিকৃতির। এরা দু’জনও দম্ভের মতোই বিকৃত স্বভাবের ছিল। ভাইবোনেরাই নিজেদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক করত।

নিকৃতির গর্ভে লোভের ঔরসে জন্ম নেয় এক পুত্র ক্রোধ, আর তার বোন ছিল হিংসা। ক্রোধ ও হিংসার মিলনেই জন্ম হয় কলির।

এই কারণেই কলি মানুষের মনে নেতিবাচক সব দিক লোভ, ক্রোধ, হিংসা, অধর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। কলির প্রভাবে মানুষের চারিত্রিক অবক্ষয়, অর্থ–ক্ষমতার প্রতি আসক্তি, মানবিকতার ক্ষয় ইত্যাদি ঘটে।

কলির রূপ – কল্কি পুরাণ অনুযায়ী বিবরণ

কল্কি পুরাণে কলির রূপ ভয়ংকরভাবে বর্ণিত হয়েছে।

  • মুখ কুকুরের মতো
  • পেট কাকের মতো
  • চোখে নরকের আগুনের মতো জ্বলজ্বল ভাব
  • এক নিমিষে মানুষের শুভগুণ গ্রাস করার ক্ষমতা
  • জিহ্বা প্রায় এক হাত লম্বা
  • পেছনে দু’টি বিশাল ডানা
  • সারা শরীরে দুর্ভেদ্য দুর্গন্ধ

এই রূপই প্রতীক মানুষের মনে লুকিয়ে থাকা অধর্ম ও অন্ধকারের।

কলি কীভাবে পৃথিবীতে প্রবেশ করল?

অর্জুনের সন্তান অভিমন্যুর পুত্র পরীক্ষিত ছিলেন মহাভারতের পরবর্তী যুগের প্রথম রাজা। একদিন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে তিনি দেখেন এক রাজবেশধারী ব্যক্তি গরু ও মহিষকে প্রচণ্ডভাবে প্রহার করছে।

সেই রাজবেশধারী ব্যক্তি ছিল কলি, আর গরু মহিষ আসলে ছিলেন ধর্মবসুন্ধরা

কলি ধর্মের তিনটি পা তপস্যা, পরিচ্ছন্নতা, করুণা ভেঙে দিয়েছিল। শুধু সত্য পাটি অবশিষ্ট ছিল।

রাজা পরীক্ষিত কলিকে শাস্তি দিতে গেলে, কলি দয়া চেয়ে পাঁচটি জায়গায় বসবাসের অনুমতি চায়।

১) জুয়ার আসর
২) মদের আসর
৩) পতিতালয়
৪) কসাইখানা
৫) সোনার দোকান

পরীক্ষিত এসব নিকৃষ্ট স্থানে তাকে থাকার অনুমতি দেন। কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন তার মাথায়ও সোনার মুকুট আছে। সোনায় কলি প্রবেশ করতে পারে। ফলে কলি রাজার মনেও প্রভাব বিস্তার করে এবং পরীক্ষিতের পতন ঘটে।

এভাবেই কলি ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে ও পৃথিবীতে অধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে থাকে।

কলির শত্রু কারা?

কলির প্রধান শত্রু ছিল ধর্ম। ধর্মের অনুচর ছিল
ঋতু, প্রসাদ, অভয়, সুখ, প্রীতি, যোগ, স্মৃতি।

ধর্মের বন্ধু ছিল! শ্রদ্ধা, মৈত্রী, দয়া, শান্তি, তুষ্টি, পুষ্টি, ক্রিয়া, উন্নতি, বুদ্ধি, মেধা, তিতিক্ষা ইত্যাদি।

কলি একে একে সবাইকে পৃথিবী থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করে, যাতে অধর্ম স্থায়ী হয়।

শেষ কথা:

কলির জন্ম, শক্তি, প্রভাব কিংবা কল্কির আগমন—সবই এক গভীর প্রতীক। অশুভ যখন চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে যায়, তখনই শুভশক্তির আবির্ভাব ঘটে। এই কারণেই আমাদের প্রত্যেকের ভিতরে কল্কির চেতনাকে জাগ্রত করতে হবে, মন থেকে কলির অন্ধকার দূর করতে হবে। ধন্যবাদ সকলেই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
sr7themes.eu.org